22 Nov 2024, 01:12 am

সৌদি আরবে জন্ম এতিম চার শিশু বেড়ে উঠবে খাগড়াছড়ির শিশু পরিবারে

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : সৌদি আরবে জন্ম নেয়া এতিম চার শিশু খাগড়াছড়ির মিশ্র শিশু পরিবারে বেড়ে উঠবে ।
জানাগেছে,দেশে আসার পর চার মাস পার হলেও চার শিশুর দায়িত্ব নিতে স্বজনরা এগিয়ে আসেনি । এখন তাদের দায়িত্ব নিয়েছে সরকার। প্রয়াত সৌদি প্রবাসী বাবা জাহাঙ্গীর আলম ও ইন্দোনেশিয়ান মায়ের চার সন্তানের শেষ আশ্রয় হয়েছে খাগড়াছড়ি’র সরকারি মিশ্র শিশু পরিবারে। এখানেই সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত চার ভাই-বোন একসাথে বেড়ে উঠবে। থাকা -খাওয়ার পাশাপাশি লেখাপড়া ও কারিগরি শিক্ষার সুযোগ পাবে তারা।
খাগড়াছড়ির মিশ্র শিশু পরিবারের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন,জামিলা, মোজাহিদ, ইয়াসমিন ও সামিয়ারার জন্ম হয়েছিল মরুর দেশ সৌদি আরবে। কয়েকবছর আগেও বাবা-মায়ের সাথে হেসে- খেলে দিন পার করছিলো তারা। অথচ আজ বাবাও নেই মাও নেই তাদের। শেষ আশ্রয় হয়েছে খাগড়াছড়ি’র সরকারি মিশ্র শিশু পরিবারে।
মিশ্র শিশু পরিবারের কর্মকর্তারা আরও জানান, কক্সবাজার সদর উপজেলার ঈদগাঁও জাগিরপাড়া এলাকার জাহাঙ্গীর আলম ২১ বছর আগে পাড়ি জমান সৌদি আরবে। সেখানেই পরিচয় হয় ইন্দোনেশিয়ান এক নারীর সাথে। পরিচয় গড়ায় পরিণয়ে। একে একে তাদের কোল জুড়ে আসে তিন কন্যা ও এক পুত্র । স্ত্রী আর চার সন্তানকে নিয়ে ভালোই কাটছিলো সবজি দোকানি জাহাঙ্গীর আলমের প্রবাসী সংসার। তবে তা খুব একটা দীর্ঘস্থায়ী হলো না, হঠাৎই বিনা মেঘে বজ্রপাত। বছর ছয়েক আগে কাউকে কিছু না বলেই স্বামী আর চার সন্তান ফেলে নিরুদ্দেশ হয়ে পড়েন  ইন্দোনেশিয়ান ওই নারী। এরপর আর খোঁজ মেলেনি তার। গত বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি জাহাঙ্গীর আলমও অসুস্থ্য হয়ে মারা যান সৌদি আরবের জেদ্দায়। সেইখানেই তাকে সমাহিত করা হয় ।সৌদি প্রবাসী মরহুম জাহাঙ্গীর আলমের বড় মেয়ে জামিলা জাহাঙ্গীর সাংবাদিকদের বলেন,‘মায়ের আকস্মিক চলে যাওয়া আর বাবার মৃত্যুতে আমরা আশ্রয়হীন হয়ে পড়ি। এরপর ঠাঁই হয় প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ওয়েজ আর্নার্স বোর্ড পরিচালিত জেদ্দার বাংলাদেশী দূতাবাসের সেইফ হোমে। সেখানে আট মাস পার করে চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের সহায়তায় আমাদের পিতৃভূমি বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়। বিমানবন্দর থেকে পাঠানো হয় সমাজসেবা অধিদপ্তরের তেঁজগাও সরকারি শিশু পরিবারে। চার মাস সেখানেই ছিলাম আমরা  চার ভাই-বোন। এই চার মাসে নিকট আত্মীয়দের কেউই এগিয়ে আসেননি।
এদিকে এই চার ভাই-বোনকে একসাথে রাখার সরকারি সিদ্ধান্তে পাঠানো হয় খাগড়াছড়ি সরকারি মিশ্র শিশু পরিবারে। সব হারিয়েও এখন একসাথে থাকতে পারাটাই তাদের কাছে আনন্দের ।
সরকারি শিশু পরিবারের (মিশ্র) উপ-তত্ত্বাবধায়ক মো. নাজমুল আহসান জানান, খাগড়াছড়ি’র এই মিশ্র শিশু পরিবারে একসাথে বেড়ে উঠবে এতিম এই চার ভাই-বোন। এখানে সরকারি খরচে থাকা, খাওয়া ও পড়ালেখার পাশাপাশি রয়েছে মেয়েদের সেলাই প্রশিক্ষণ ও ছেলেদের কারিগরি শিক্ষার সুযোগ। এছাড়া খেলাধুলা ও বিনোদনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থাও রয়েছে সরকারি এই মিশ্র শিশু পরিবারে।
তিনি বলেন, প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত এখানেই বেড়ে উঠবে তারা। এখন তাদের বিদ্যালয়ে ভর্তি প্রস্ততি নিচ্ছে শিশু পরিবার কর্তৃপক্ষ।
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, মংসুইপ্রু চৌধুরী, বলেন, সমাজসেবা অধিদপ্তর পরিচালিত মোট ৮৫টি শিশু পরিবার রয়েছে। এরমধ্যে একমাত্র মিশ্র শিশু পরিবার খাগড়াছড়িতে। পিতা-মাতাহীন এই চার ভাই-বোন যাতে সুন্দরভাবে একসাথে বেড়ে উঠতে পারে সেজন্য খাগড়াছড়ি শিশু পরিবারে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এখানে বর্তমানে আরও ৫০ জন ছেলে ও  ৫০ জন মেয়ে শিশু রয়েছে।

 

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • Visits Today: 6795
  • Total Visits: 1263998
  • Total Visitors: 4
  • Total Countries: 1668

আজকের বাংলা তারিখ

  • আজ শুক্রবার, ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং
  • ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (হেমন্তকাল)
  • ১৯শে জমাদিউল-আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরী
  • এখন সময়, রাত ১:১২

Archives

MonTueWedThuFriSatSun
    123
18192021222324
252627282930 
       
15161718192021
293031    
       
  12345
2728     
       
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
31      
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930   
       

https://youtu.be/dhqhRb9y018